কুমিল্লার দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়া দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল প্রনব দাস – কুমিল্লা থেকে
- আপডেট সময় : ০৭:৪১:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে মাজহারুল সৈকত অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মাজহারুল ইসলাম সৈকত বলেন, যুবলীগ নেতা জামাল হত্যার দুই থেকে তিন দিন আগে বরকামতা আশ্রমের পাশে আমাকে ফোনে ডেকে নেয় মাসুদ কাকা। সেখানে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান এর ছোট ভাই মাসুদ কাকার সাথে আরিফ, কালা মনির, দেলোয়ার, শাহ আলীসহ একটি কালো মাইক্রোবাসে বেশ কয়েকজন ছিল। মাইক্রোবাস থেকে একটি ভারী ব্যাগ দিয়ে আমাকে মাসুদ কাকা বলেন, ব্যাগটি যেন মাসুদ কাকার ঘরের আলমিরাতে রেখে আসি। আমি ব্যাগটি মাসুদ কাকার স্ত্রীর সাহায্যে আলমিরাতে রাখি।
এরপর তারা সকলে মাইক্রোবাসে করে নোয়াখালীর সূবর্ণচরে চলে যায়। মাজহারুল আদালতে আরো বলেন, গত ২ মে দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মিডিয়াতে দেখি। পরে ৯ মে মাসুদ কাকা আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নেন। তিনি আমাকে বলেন ‘ সেদিনের ব্যাগটা নিয়ে ঝামেলা হয়ে গেছে, ব্যাগটা হাইওয়ের পাশে যেকোন জায়গায় রেখে আসতে হবে’ আমি কি ঝামেলা জিজ্ঞাসা করলে মাসুদ কাকা বলেন, ওসব তোকে বলা যাবেনা। পরে ওনি ব্যাগ নিয়ে আমার মোটর সাইকেলের পিছনে উঠে বসে আমাকে চান্দিনা বাজারের দিকে যেতে বলেন। আমি বাজারের দিকে রওয়ানা হয়ে আমার বাবার ফার্মেসীর সামনে আসলে তিনিি আমাকে থামতে বলেন, আমি মোটর বাইক থামালে তিনি বাইক থেকে নেমে মোবাইল ভর্তি ভারী ব্যাগটি একটি ঝোপে লুকিয়ে রেখে চলে আসেন।
আমাকে এসে বলেন, ব্যাগটা এখানে থাক পরে এসে নেব, তুই কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। এরপর মাসুদ কাকা কাঁধের স্কুল ব্যাগটা নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একটি ঝোপের মধ্যে রেখে আসেন। এবং আমাকে বলেন তাকে এলাকায় নামিয়ে দিয়ে আসতে আমি ওনার কথামত কাকাকে এলাকায় নামিয়ে ক্যান্টম্যান্ট জিহান রেস্টুরেন্টের সামনে যাই আমার কিছু বন্ধুর সাথে দেখা করতে। পরে সেখানে গোয়েন্দা পুলিশ এসে আমাকে ধরে ফেলে। পরে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আমি মোবাইল ব্যাগ ও নীল রঙের স্কুল ব্যাগ কোথায় আছে দেখিয়ে দেই। পরে তারা সেই ব্যাগ দুটি উদ্ধার করে। ব্যাগ থেকে দুইটি অত্যাধুনিক বিদেশী পিস্তল ও একটি রিভলবার পায়। মামলার সূত্রে জানা গেছে, ১০ মে মাজহারুল কে গ্রেফতার করে কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর একদিন পর মালদ্বীপে পলায়ন কালে দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মো মাসুদকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মাজহারুলকে প্রধান আসামী করে ছয়জনের বিরুদ্ধে চান্দিনা থানায় একটি অস্ত্র মামলা করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুলের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ওসি রাজেস বড়ুয়া বলেন, চান্দিনা থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলার প্রধান আসামী মাজহারুল আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা গভীর ভাবে তদন্ত করছি। আশা করছি জামাল হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য-উপাত্ত বেড়িয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, মাজহারুল ইসলাম সৈকত বরকামতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটকের পর তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। মাসুদ যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলার ১০ নম্বার আসামী। কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে তিন ব্যক্তি বোরকা পরে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে। নিহত জামাল হোসেন তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে।