ছিনতাইকারীর দেওয়া এসিডে দগ্ধ শরীর,উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হলেও অর্থভাবে পড়ে রয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

- আপডেট সময় : ১১:০৬:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫ ৪৭ বার পড়া হয়েছে

মোঃ ইব্রাহীম মিঞা,বিরামপুর (দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
বাড়ি থেকে চার্জার ভ্যান নিয়ে সকালে কাজের খোঁজে বেরিয়েছিলেন বাবলু মিয়া। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত, রাত পেরিয়ে আবার সন্ধ্যা হয়ে গেলেও খোঁজ মেলে না বাবলু মিয়ার। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে থানার মাধ্যমে খোঁজ মিলে বাবলু মিয়ার। উপজেলার আশুরার বিলের পাশে বিবস্ত্র শরীরে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলন বাবলু মিয়া। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রেফার্ড করে। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাহিরে নেয়া সম্ভব হয়নি তাঁর পরিবারের। অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ ওয়ার্ডে ১০ নং বেডে কাতরাচ্ছেন বাবলু মিয়া।
সোমবার (৫ মে) বিকেলে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসিডে দগ্ধ স্বামীর পাশে স্বামীর সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় বসে রয়েছেন স্ত্রী বুলন বেগম।সে প্রতিদিন ভোরে নিজের সংসারের কাজ সেরে সারাদিন মানুষের বাড়িতে কাজ করে অভাবের সংসারে জোগান দেয়। স্বামী বাবলু মিয়া গাছ, গাছের ডালের খড়ি চিরে দিনের দিন অভাবের সংসার চালিয়ে যাচ্ছে।এই অভাবের মাঝে একমাত্র ছেলে সন্তানের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ভেঙে যায় তাঁদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। এরপরও দিন আনে দিন খেয়ে পাড়া প্রতিবেশীর সহোযোগিতায় ৩ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।বড় মেয়ে বিয়ের পর ১ ছেলে রেখে অসুস্থ জনিত কারণে মারা যায়।বর্তমানে বড় মেয়ের রেখে যাওয়া সন্তান (নাতি ) রাহুলকে নিয়ে পৌরশহরের ৪ নং ওয়ার্ডের ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা কৃষ্টচাঁদপুর নামা পাড়ায় নাতিকে মানুষ করার স্বপ্ন বুনছেন। এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২৭ হাজার টাকা জোগাড় করে ৩ হাজার ২০০ টাকার কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকার চার্জার ভ্যান নিয়েছেন। ২ মাস ভ্যান চালিয়ে দিয়েছেন ২ টি কিস্তি । বর্তমানে এই চার্জার ভ্যানটি হয়েছে তাঁর জীবনের কাল।
পরিবার সুত্রে জানাযায়, শনিবার সকালে ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিলেন।রবিবার রাত পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁর খোঁজ না পাওয়ায় বিরামপুর থানায় গিয়েছিলাম অভিযোগ করতে। অভিযোগ করতে গিয়ে জানতে পারি খানপুর ইউনিয়নের আশুরার বিলের এক ব্যক্তির বিবস্ত্র দেহ পড়ে রয়েছে। আশুরার বিলের পাশে গিয়ে পরে থাকা বিবস্ত্র শরীর দেখে ভেবেছিলাম মারা গেছে। পরবর্তীতে হাত নাড়তে দেখলে দ্রুত বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। তাঁর বাম পাজরের শুরু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়ে চার্জার ভ্যানটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিয়ার পারভেজ বাবলু মিয়ার অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেন। কিন্তু অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি তাঁর পরিবার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাতরাচ্ছেন বাবলু মিয়া আর অসুস্থ স্বামীকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে স্ত্রী বুলন বেগম।
অসহায় গরীব খেটে খাওয়া বাবলু মিয়ার ভ্যান ছিনতাই, শরীরে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, বিবস্ত্র শরীরে জঙ্গলের পাশে আশুরার বিলের ধারে ফেলে রাখার ঘটনা,এলাকার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক মানুষের ভিড়ে ভারী হয়ে উঠে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ।
বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক এর সাথে এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করতে আসলে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে ভ্যান ছিনতাইয়ের ব্যাপারে অভিযোগ করলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও তিনি জানান,পরিবারটি অসহায় গরীব হওয়ায় তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।